বিভুরঞ্জন সরকারের শেষ খোলা চিঠি : এক সাংবাদিকের ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি, জাতির জন্য প্রশ্নচিহ্ন
স্বাধীনতার ৫৫ বছর পরও বাংলাদেশে নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার আর সত্য উচ্চারণের পরিবেশ অনিশ্চিত। এর সবচেয়ে নির্মম প্রমাণ হয়ে উঠলেন প্রবীণ সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকার। তিনি জীবনের শেষ প্রহরে একটি খোলা চিঠি লিখে গেছেন—যা কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অভিমান নয়, বরং গোটা জাতির ব্যর্থতার দলিল।
অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিভুরঞ্জন। দৈনিক আজাদ থেকে শুরু করে দেশের নানা পত্রিকায় লিখেছেন সত্যের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদের সামরিক শাসন, রাজনৈতিক উত্থান–পতন—সবকিছুই প্রত্যক্ষ করেছেন। ছাত্রজীবনে ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সম্পাদক। কখনো নিজের নাম গোপন রেখে লিখেছেন, কিন্তু সত্যকে আড়াল করেননি।
তবুও তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে প্রাপ্তির চেয়ে বঞ্চনাই ছিল বেশি। প্লট, সুযোগ-সুবিধা, আর্থিক নিরাপত্তা—সবকিছু থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। অসংখ্য সহকর্মী যখন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, সরকারি সুযোগ কিংবা আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন, তখন তিনি থেকেছেন নিঃস্ব। বারবার ঋণ করে সংসার চালিয়েছেন, অসুস্থ শরীর নিয়ে লড়েছেন আর সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রাম করেছেন।
শেষ সময়ে তিনি লিখে গেছেন—
“সত্য লিখতে হলে ব্যক্তিগত সুখ বিসর্জন দিতেই হয়। কিন্তু সারাজীবন যদি ঋণ আর অনিশ্চয়তা নিয়েই কাটাতে হয়, তবে সেটাই নিয়তি।”
তাঁর খোলা চিঠিতে উঠে এসেছে প্রিয়জনদের কথা, সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, অভিমান আর দেশের রাজনীতি ও গণমাধ্যমের প্রতি গভীর হতাশা। তিনি নিজের অযোগ্যতাকেও স্বীকার করেছেন, আবার জাতির কাছে প্রশ্ন রেখে গেছেন—“আমরা কবে সত্যিকার মানুষ হবো?”
২১ আগস্ট ভোরে লিখিত এই চিঠিটি এখন শুধু একজন সাংবাদিকের বিদায়ী বাণী নয়—এটি হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক অনন্ত দলিল।