ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র, অর্থনীতির ইঞ্জিন, ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু। তবে এই শহরটি দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে যানজট, অপরাধ, জলাবদ্ধতা, দখল-বেদখল, পরিবেশ দূষণ ও নাগরিক নিরাপত্তাহীনতার নানা জটিল সমস্যায়। নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক ঢাকা। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখন একযোগে কাজ করছে সরকার, সিটি কর্পোরেশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এবং সাধারণ মানুষ।
নগরজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে হাজারো সিসিটিভি ক্যামেরা। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) যৌথভাবে ‘স্মার্ট সিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমন এবং জরুরি সহায়তা এখন অনেক দ্রুত ও সমন্বিতভাবে হচ্ছে। ডিজিটাল তথ্যভান্ডার, রিয়েলটাইম মনিটরিং সিস্টেম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার এখন অনেক সহজ।
পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠছে “কমিউনিটি পুলিশিং” ইউনিট। স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ একত্রে কাজ করে গড়ে তুলছে নিরাপত্তাবলয়। এর মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করা যাচ্ছে শিশু অপরাধ, মাদক সমস্যা, গ্যাং কালচার ও গৃহস্থালী সহিংসতার মতো নানা সামাজিক সমস্যায়।
নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে চালু হয়েছে “নারী সহায়তা বুথ”, হেল্পলাইন নম্বর (৯৯৯) আরও সক্রিয় হয়েছে, এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে নারী ও শিশু-বান্ধব বিশ্রামাগার, শৌচাগার ও লাইটিং সিস্টেম। পাশাপাশি স্কুল ও কলেজে সচেতনতামূলক সেমিনার এবং কর্মশালার মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
ঢাকাকে নিরাপদ করতে উন্নয়নকাজ চলছে পরিকল্পিতভাবে। ঢাকার রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা হয়েছে, ফুটপাত দখলমুক্ত করা হচ্ছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে বৃহৎ প্রকল্প। নগরবাসীর জন্য নির্মিত হচ্ছে নিরাপদ ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস ও বিশেষভাবে ডিজাইন করা পথচারী জেব্রা ক্রসিং।
পাশাপাশি দূষণরোধে গ্যাসচালিত যানবাহন, ইলেকট্রিক বাস ও নানাবিধ পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ঢাকায় চালু হয়েছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬)। এটি ঢাকার জনজট, যাতায়াত ঝুঁকি ও ট্রাফিক অনিরাপত্তা কমিয়ে এনেছে উল্লেখযোগ্য হারে। মেট্রোরেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আন্তর্জাতিক মানের। এতে নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নগর প্রশাসন বলছে, নিরাপদ ঢাকা গড়ার জন্য শুধু সরকারি পদক্ষেপ নয়, প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ। রাস্তা-ঘাটে ট্রাফিক আইন মানা, অপরিচিত ব্যক্তির প্রতি সতর্ক থাকা, পারিপার্শ্বিক অপরাধ রিপোর্ট করা ও নিজেদের আশপাশে নজর রাখা—এগুলো সবার দায়িত্ব।
তবে এখনো ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। যেমন—অপরিকল্পিত বসবাস, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা, মাদক সমস্যা, সাইবার অপরাধ ইত্যাদি। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সমন্বিত, টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন।
নিরাপদ ঢাকা আর কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি এখন একটি চলমান বাস্তবতা। চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে রাজধানীর চিত্র। নাগরিকদের অংশগ্রহণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে কার্যকর উদ্যোগ ও দূরদর্শী পরিকল্পনার মাধ্যমে একদিন বাস্তবেই ঢাকা হয়ে উঠবে একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন, মানবিক ও স্মার্ট নগরী।