‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’: হাসির আড়ালে একাধিক জীবনের গাথা
“তুই কয়টা বিয়া করছিস?”
“চাইরডা।”
“তাইলে আমি কয় নম্বর?”
“ছয় নম্বর।”
মাত্র এই কয়েকটি সংলাপেই আগুন ধরেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুক্তির আগেই ট্রেলার দেখে অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন—আসছে এক হাড়ভাঙা হাসির সিরিজ। অমিতাভ রেজা চৌধুরীর পরিচালনায় ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ ঠিক কতটা মজার, আর কতটা বাস্তবের প্রতিচ্ছবি—তা বোঝা যায় পর্দায় একে একে ৮ স্ত্রী এবং ট্রাকচালক আব্বাসের (মোশাররফ করিম) চমকপ্রদ অভিযাত্রা শুরু হওয়ার পর।
শুরু এক প্রেম, পেছনে লেগে আছে অতীত
আব্বাস পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সুন্দরীকে (সাদিয়া আয়মান) নিয়ে। তাড়া করে আসছেন ৯ নম্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, যার দাবি—সে সুন্দরীর ‘সুগার ড্যাডি’। অথচ সুন্দরীকে বিয়ে করতেই চায় না আব্বাস, কারণ তার মতে “৮ মানেই নট!” অর্থাৎ অশুভ। কিন্তু বাধ্য হয়েই বিয়েতে রাজি হতে হয় তাকে। এখান থেকেই শুরু এক বিশাল গোলকধাঁধা—৮ জন স্ত্রী আর এক ‘বোহেমিয়ান’ জীবন।
৮ স্ত্রীর ৮ রকম জীবন
আটজন নারীর জীবনের টুকরো গল্পই সিরিজটির আসল চালচিত্র। কারও জীবন সংগ্রামে ভরা, কেউ আবার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন।
-
নূরজাহান (তানজিকা আমিন) স্বনির্ভর নারী, যিনি নিজের ঘর তো চালানই, অন্য নারীদেরও স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখান।
-
জয়গুন (ফারহানা হামিদ) একজন শান্তস্বভাবের স্ত্রী, যাঁর জীবন এক রকম অন্তর্দহন।
-
মৌসুমী হামিদ ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দরবনের একজন কর্মঠ নারী।
-
রুনা খান ‘গরম মেজাজের’ আম্বিয়া চরিত্রে যেমন শক্তিশালী, তেমনই আবেগী।
সেই সঙ্গে রয়েছে আদিবাসী মুর্মু (আসমা উল হুসনা বৃষ্টি), কিশোরীসুলভ সুন্দরী (সাদিয়া আয়মান), সংক্ষিপ্ত দৃশ্যের সুরেখা (সারাহ জাবিন), এবং ভিন্নমাত্রার রোবেনা রেজা জুঁই। প্রত্যেকটি চরিত্রেই আছে এক টুকরো জীবন, এক টুকরো বাস্তব।
মোশাররফ করিম: পুরোনো সেই জাদুই ফিরেছেন?
এ সিরিজে মোশাররফ করিম আবারও তার পারফর্ম্যান্স দিয়ে চমকে দিয়েছেন। সংলাপে, অভিব্যক্তিতে, কমিক টাইমিংয়ে তিনি ছিলেন অনবদ্য। যদিও কিছু দর্শক পুরোনো ‘হাই ইমপ্যাক্ট’ মোশাররফকে পুরোপুরি ফিরে পাননি, তবে এই চরিত্রে তাঁর ভার্সেটিলিটি স্পষ্ট।
রাকিব ইভন অভিনীত সহকারী সেলিমের সঙ্গেও তার দারুণ কেমিস্ট্রি। দুজনের হাস্যরস, আন্তরিকতা এবং হতাশা—সবকিছুই দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে।
নির্মাণ, দৃশ্য, আর ক্যামেরার কাজ
অমিতাভ রেজার আগের কাজ ‘ঢাকা মেট্রো’-র মতো এটিও রোড সিরিজ, কিন্তু টোন সম্পূর্ণ ভিন্ন। গল্পে আছে হিউমার, আবার আছে গ্রামীণ সংস্কৃতির নিপুণ চিত্রায়ণ।
-
ট্রাকের ছাদে সাজানো বাসর,
-
সবজির ঝুড়ির নিচে লুকানো চরিত্র,
-
রঙের বর্ণনায় ট্রাক, পোশাক বা লোকেশন—সবকিছুই চোখে লেগে থাকার মতো।
কামরুল হাসান খসরুর ক্যামেরা আর জাহিদ নিরবের আবহসংগীত একে আরও প্রাণবন্ত করেছে। লোকগান ‘আতা লতা’-তেও ফুটে উঠেছে এক প্রাকৃতিক গ্রাম্য সৌন্দর্য।
শক্তি ও সীমাবদ্ধতা
সিরিজটির বড় শক্তি—এর ভাষা ও সংলাপ। সাধারণ কথোপকথনেই ফুটে উঠেছে তীক্ষ্ণ রসবোধ। তবে কিছু আঞ্চলিক উচ্চারণের ক্ষেত্রে সামান্য ভিন্নতা ধরা পড়েছে।
সমালোচনার জায়গায় বলা যায়, শেষটা যেন হঠাৎ গতি হারিয়েছে।
৮ বউয়ের কনফ্রন্টেশনের যে আগ্রহ ট্রেলার তৈরি করেছিল, তা নির্মাতা পুরোপুরি কাজে লাগাননি। একইসঙ্গে সিরিজের সময়সীমাও কিছুটা চাপ তৈরি করেছে গল্পের গভীরতায়। অপরাধ উপাদান পরের দিকে যোগ হওয়াও অনেকের কাছে অতিরিক্ত মনে হতে পারে।
‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’ একদিকে যেমন মজার, অন্যদিকে তেমনি বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। আব্বাসের চরিত্রের মাধ্যমে নির্মাতা আমাদের এক আধিপত্যবাদী পুরুষকে দেখান, যিনি নারীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন—তবুও দর্শক তাঁর প্রতিই সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। এই দ্বৈত অনুভূতিই সিরিজটির সার্থকতা।
দৈনিক টার্গেট
খুব শীঘ্রই পত্রিকা বাজারে আসছে!
সত্য সংবাদ, নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ ও পাঠকের আস্থায় দৈনিক টার্গেট এগিয়ে চলেছে নতুন দিগন্তে।
“সত্যের পথে, জনগণের কণ্ঠস্বর”