জমে থাকা বর্জ্য, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতা, এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতায় রাজধানীজুড়ে ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। নাগরিকদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দীর্ঘ বর্ষা মৌসুম এবং অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে নগরবাসীকে প্রতি বছরই ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার এবং আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের।

এর মধ্যে আশার খবর—দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ (ডিএসসিসি), এবার মশা দমনে একাধিক নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

ডিএসসিসি প্রশাসকের ঘোষণা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া NDN বাংলাকে বলেন,
“আমরা নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। নগরবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সক্রিয়ভাবে মাঠে নামতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

প্রশাসক আরও জানান, নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন করে ওষুধ ছিটানো, জমে থাকা পানি অপসারণ, মশার প্রজননস্থল ধ্বংস এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংখ্যা।

ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি, বাজেট ব্যয় অপ্রতুল

উল্লেখযোগ্য যে, চলতি অর্থবছরে ডিএসসিসির মশা নিয়ন্ত্রণ বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৪৪ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছর ছিল ৪০ কোটি টাকা। ডিএনসিসি বরাদ্দ পেয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। কিন্তু জনসংখ্যার তুলনায় এই বাজেটকে অপর্যাপ্ত বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে মশা নিয়ন্ত্রণের নামে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে রয়েছে নানা দুর্বলতা।

উদ্দেশ্যপূর্ণ কর্মপরিকল্পনার ঘাটতি

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবলমাত্র ওষুধ ছিটিয়ে মশা দমন করা সম্ভব নয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন,
“ড্রেনেজ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নগর স্থাপত্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। শুধু বরাদ্দ নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

বছরভিত্তিক বরাদ্দ চিত্র (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন):

  • ২০১৫-১৬ অর্থবছর: ২৪ কোটি টাকা

  • ২০১৬-১৭: ৩৫ কোটি টাকা

  • ২০১৭-১৮: ৪০ কোটি টাকা

  • ২০১৮-১৯: ৪২ কোটি টাকা

  • ২০১৯-২০: ৫০ কোটি টাকা

  • ২০২০-২১: ৪৯ কোটি টাকা

  • ২০২১-২২: ৫০ কোটি টাকা

  • ২০২২-২৩: ৫১ কোটি টাকা

  • ২০২৩-২৪: ৪৪ কোটি টাকা

সচেতনতার অভাবও বড় কারণ

নগরবাসীর মধ্যে এখনো ডেঙ্গু সম্পর্কে পর্যাপ্ত সচেতনতা গড়ে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। অনেকেই জমে থাকা পানি, পুরোনো টায়ার, টবে পানি জমিয়ে রাখছেন—যা মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতায় এলাকাভিত্তিক সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বরাদ্দ বেড়েছে, আশ্বাস এসেছে বহুবার, কিন্তু বাস্তবে মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর অগ্রগতি এখনও দৃশ্যমান নয়।
নাগরিকদের স্বস্তি ফেরাতে এখনই প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ, জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থাপনা এবং জনসচেতনতায় স্থায়ী পরিবর্তন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *